Advertisement for African All Media List

বিজয়ের ৫০ বছর, দেশী-বিদেশী চক্রান্ত ও দেশপ্রেম

মীর দীনার হোসেন : বিজয়ের ৫০ বছর, দেশী-বিদেশী চক্রান্ত ও দেশপ্রেম আজ ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। বিশ্বের বুকে স্থান পায় বাঙালির লাল-সবুজের পতাকা।

গভীর ভালোবাসা ও সালাম সকল বীর সেনা ও সেনানীদের যাদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা, এই বিজয়। আমরা তোমাদের ভুলবনা, ভুলবনা। আমরা আর ও ভুলবনা সকল বাঙালির দোসর রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস দের, যারা কখনও চাইনি বাংলাদেশ নামক কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হোক। ঐ সকল অপশক্তি এখনও বাংলার বুকে বীর দর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সুযোগ পেলে করে যাচ্ছে ক্ষতি সাধন অবিলম্বে তাদের চিহ্নিত পূর্বক গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আজ বাংলাদেশ তলা বিহীন ঝুড়ি নই।

বাংলাদেশ আজ কোন পরাশক্তির নিকট নতজানু নই, সকল রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ আদায়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারকে আমরা দেখেছি চোখে চোখ রেখে কথা বলতে, কোন অন্যায় আবদারের ক্ষেত্রে মাথা নত করতে আমরা দেখেনি। যে বাংলাদেশকে কুচক্রী যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন সাহেব তলাবিহীন ঝুড়ি বলে বাংলাদেশ বিরোধীতা করেছিলেন, সেই নিক্সন সাহেবের উত্তরাধিকারী জো বাইডেন স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একই খেলায় মত্ত।

সেই নোংরা খেলার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত গণতন্ত্র সম্মেলন ৯ ও ১০ই ডিসেম্বর ডাক দিয়েছিল যা বিশ্বের ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশকে বাইরে রাখে। পরবর্তীতে হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ কর্তৃক ঠুনকো অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক প্রধানদের কালো তালিকাভুক্ত করণ। সম্ভবত সামনে আর বড় ধরনের কু-চিন্তা ভাবনা করছে, দেখতে পাব।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্রে এই দুটি উপাদান আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে হলে আমাদের আতশি কাঁচের সাহায্য নিতে হবে। বিশ্ব মানবাধিকারকে যারা হত্যা করে চলেছে তাদের কাছে মানবাধিকারের গল্প মানাই না। আমরা দেখেছি আমেরিকার হাতে সাজানো আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ধ্বংস হতে। প্রতিনিয়ত দেখছি নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপর জায়ান্ট ইসরাইলের বুলেট বর্ষন ও আমেরিকার নিরবতা।

মূলতঃ কোয়াড ( যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের) সামরিক ফোরামে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তি করতে না পেরে বিভিন্ন কুটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আজও বাংলাদেশে বিশেষ একটি শ্রেণী বাস করে যারা বাংলাদেশের নুন খায়,আর গুন গায় ভারত কিংবা পাকিস্তানের। আর সুযোগ পেলে সম্পদ গড়ে ঐসব রাষ্ট্রে। কারণ এরা কখনও বাংলাদেশকে নিজস্ব মাতৃভৃমি হিসেবে মনে করেনা। এদের উদ্দেশ্য কবি আব্দুল হাকিম বলেছিলেন ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।। দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায়। নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।।’

স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা আরও দেখতে পাচ্ছি লুটরাজ, দূর্নীতিবাজ একটি শ্রেণী। যারা দেশ ও জনগণের টাকা লুট করে ইউরোপ আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। নিজেদের সন্তানকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় দীক্ষিত করতে এবং স্থায়ী আবাসন গড়তে সদা তৎপর। বাংলাদেশকে সেবা দেওয়ার পরিবর্তে টাকা কামানোতে যারা অধিক মনোযোগ দিয়ে থাকেন। এরাও দেশের শত্রু এবং অনতিবিলম্বে এদেরকে নিষ্ক্রিয় করা না গেলে কাঙ্খিত ২০৪১ সালের উন্নত দেশের স্বপ্ন হয়ত স্বপ্নই থেকে যাবে। সর্বোপরি বিজয়ের ৫০ বছরে ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা যেকোন কূচক্রী মহল, হোক সেটা দেশের অভ্যন্তরীণ অথবা বহিঃ কোন শত্রু হতে রক্ষা করতে হবে।

একমাত্র দেশপ্রেম জাগ্রত করেই দেশী-বিদেশী কূচক্রী মহলের কূটচক্রান্ত ও কুটকৌশলকে পরাজিত করে সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। স্বাধীনতার ৫০ বছরের শপথ হোক দেশপ্রেমের শপথ, শপথ হোক সকল শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের এই বাংলাদেশকে আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়ব। প্রয়োজনে আর একবার যুদ্ধ করব, যে যুদ্ধ হবে বাংলাদেশ বিরোধী দেশী-বিদেশী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে।

শেয়ার করুন »

লেখক সম্পর্কে »

মন্তব্য করুন »