Advertisement for African All Media List

ফেনীতে সবজির লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছেন হোটেল ব্যবসায়ী ও নিম্নআয়ের মানুষ

মোঃ ইউনুছ ভূঞাঁ সুজন, ফেনী জেলা প্রতিনিধি : ফেনীতে সবজির লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছেন হোটেল ব্যবসায়ী ও নিম্নআয়ের মানুষ। ফেনীতে একের পর এক সবজি ও কাঁচামালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারনে হিমশিম খাচ্ছেন হোটেল রেস্তোরা ব্যবসায়ীরা। করোনা ভাইরাস প্রাদূর্ভাবের কারনে প্রায় ২০টি হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি ফেনী জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ কাঁচা মালের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস মহামারিতে মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহুর্তে কাঁচাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কাঁচা পণ্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এতে দিশেহারা হোটেল-রেস্তোরা মালিকরাও। করোনা ভাইরাস মহামারিতে ৩ মাস হোটেল বন্ধ থাকার পর চালু হলেও আগের মতো নেই কাস্টমার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হোটেল খোলা হলেও আগের মতো হোটেলে এখন আর মানুষ ভিড় জমায় না। এতে করে হোটেল মালিকদের দুশ্চিন্তা দিনদিন বেড়েই চলেছে।

একদিকে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি অন্যদিকে হোটেলে ভোক্তাদের তেমন একটা ভিড় নেই। এসব কারনে হোটেল মালিকরা প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফেনীতে ৬০টি হোটেলের মধ্যে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক চাকুরী করছেন। হোটেল বন্ধ হলে শুধুমাত্র মালিক পক্ষের ক্ষতি হবে না বরং ২ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। হোটেলে চাকুরীই তাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। হোটেল বন্ধ হওয়া মানে শত শত পরিবারের জীবন-জীবিকায় ভাটা পড়বে।

ইতোমধ্যে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের এফ রহমান এসি মার্কেটে নিচে অবস্থিত মেজবান হোটেল, আল-কেমী হাসপাতালের নিচে অবস্থিত হোটেল সহ প্রায় ২০টি হোটেল এখনো বন্ধ রয়েছে। কলেজ রোডে অবস্থিত ক্যাফে আল বারিক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মালিকানা পরিবর্তন হয়ে মাসখানেক আগে চালু হয়েছে। একই ভাবে শহরের মিজান রোডের গ্র্যান্ড হক টাওয়ারের নিচে অবস্থিত গানচিল হোটেল মাসখানেক আগে চালু হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি ফেনী জেলা শাখার সভাপতি নুরুন্নবী পাটোয়ারী জানান, চলমান করোনা ভাইরাস মহামারিতে ৩ মাস হোটেল বন্ধ থাকায় হোটেল শ্রমিকরা মোবাইল ফোনে কল করে কান্নাকাটি করেছে। তারা তাদের পরিবার- পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করার কথা বলে আর্তনাদ করেছে। কিন্তু দু:খজনক হতেও সত্য কোন রকম প্রণোদনা তারা পায়নি।

যে সকল হোটেল মালিকরা সাবলম্ভী তারা নিজস্ব শ্রমিকদের সহায়তা করলে যে সব হোটেল ঋণগ্রস্থ তাদের শ্রমিকগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে। বিগত ২ মাসেরও বেশী সময় সকল প্রকার কাঁচামালের আকাশছোয়া মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষে পাশাপাশি হোটেল মালিকরা সংকটাপন্ন সময় পার করতে হচ্ছে। সকল প্রকার কাঁচা পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের আরো নজরদারী প্রয়োজন।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ফেনী জেলা শাখা সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আফছার কবির শাহাজাদা জানান,করোনা ভাইরাস মহামারিতে ৩ মাস হোটেল বন্ধ থাকায় প্রায় ২ হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবন-যাপন করেছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

কিন্তু কোন হোটেল মালিক তো দূরের কথা কোন শ্রমিকও প্রণোদনার আওতায় আসেনি। ৩ মাস হোটেল বন্ধ থাকাকালীন সময়ে শ্রমিকরা ফোন করে তাদের মানবেতর জীবন যাচ্ছে বলে জানাতো। তখন আমরা রেস্তোরা মালিক সমিতি শ্রমিকদের সাধ্যনুযায়ী সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছি। কিন্তু দু:খ জনক বিষয় হচ্ছে বিগত ১০ বছরে পদে পদে ভ্যাট বৃদ্ধি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল ইউনিট আগে ছিল ৪টাকা এখন বৃদ্ধি হয়ে ১২টাকা হয়েছে। একইভাবে গ্যাস প্রতি ইউনিটের মূল্য ছিল ৭টাকা তা এখন বৃদ্ধি হয়ে ২৩টাকা হয়েছে। কিন্তু ভাত প্রতি প্লেট আগেও ১০টাকা ছিল এখনও তা আছে। চা ১০টাকা রয়েছে।

তিনি আরো জানান, ভোক্তাদের আয় ক্ষমতা চিন্তা করে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়নি। কিন্তু দিন দিন সবজি,ও কাঁচা মালের মূল্যবৃদ্ধিতে হোটেল মালিকরা হোটেল বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ হোটেলগুলোতে দেশীয় উৎপাদিত সকল পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষক এবং শ্রমিকদের বাঁচাতে হলে হোটেল গুলো বাঁচাতে হবে।

শেয়ার করুন »

লেখক সম্পর্কে »

মন্তব্য করুন »